এক দেশ, এক কার্ড মিশে যাবে আধার, ভোটার, প্যান, প্রস্তুতি কেন্দ্রের
সেন্সাস শেষ করে ডিজিটাল রিপোর্ট আসার অপেক্ষা। ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের (এনপিএস) ডেটা ব্যবহার করে তারপরই আসতে চলেছে একটি নতুন মাল্টিপারপাস কার্ড। আর তাতে মিলে যাবে আধার, প্যান এবং ভোটার পরিচয়পত্র। ২০১৯ সালের উদ্যোগ এখন বাস্তবেই মোদি সরকারের পরিকল্পনার শেষ পর্বে। কারণ, নাগরিকদের জন্য একটিই মাত্র কার্ড চায় কেন্দ্র। সেই কার্ডে ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেটকেও যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এমনকী কারও মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেটের তথ্য যাতে ওই কার্ডের নেটওয়ার্কে আপলোড হয়ে যায়, থাকবে সেই ব্যবস্থাও। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মৃত ব্যক্তির মাল্টিপারপাস সিটিজেনস কার্ড দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। অর্থাৎ ওই কার্ডের মালিক যে মৃত, সেটি তৎক্ষণাৎ সরকারের পপুলেশন রেজিস্টারে নথিভুক্ত হয়ে যাবে।
করোনা মহামারী হানা দেওয়ার পর থমকে গিয়েছিল সেন্সাস। মাল্টিপারপাস কার্ডের গোটা পরিকল্পনাটাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখন। চলতি বছর আবার সেন্সাস শুরু হবে। তাই অভিন্ন কার্ডের পরিকল্পনাও ফের উঠে এসেছে শিরোনামে। রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (আরজিআই) এবং সফ্টওয়্যার এজেন্সিগুলির সঙ্গে কথাও বলছে কেন্দ্র। সরকারের যুক্তি হল, একাধিক কার্ড রাখার বদলে একটি নাগরিকত্ব তথা তথ্য পরিচয়পত্র থাকাটা নাগরিকদের জন্যও সহজ ও সুবিধাজনক। পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য এই মাল্টিপারপাস কার্ডে আপডেট করার ফলে প্রতিনিয়ত জানা যাবে দেশের প্রকৃত নাগরিকদের সংখ্যা ও তথ্য। ডেথ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হয়ে গেলে মৃতের নামে ভোটদান কিংবা মৃত ভোটারদের কার্ড ব্যবহার করার প্রবণতাও আর থাকবে না। অর্থাৎ জাল ভোট অথবা ভোটের জালিয়াতি বন্ধ করা যাবে। পাশাপাশি এই কার্ডের মাধ্যমেই সরকারের ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের টাকার ভর্তুকি গরিব ও কৃষকদের দেওয়া হবে। ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেয়েছিল মোদি সরকার। করোনার কারণে আপাতত প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হলেও সেই লক্ষ্যমাত্রাই সামনে রাখা হচ্ছে। কারণ, এবার সেন্সাসের প্রক্রিয়া হবে ডিজিটাল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাগজে কলমেই শুধু গণনাকর্মীরা নাগরিকদের তথ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহ করবে না। একটি বিশেষ অ্যাপ চালু হবে। আরোগ্য সেতুর ধাঁচে ওই সরকারি অ্যাপ ডাউনলোড করে নাগরিকরা তাঁদের তথ্য আপলোড করে দিতে পারবেন। ফলে সেন্সাস সমাপ্ত হওয়ার পর সব সংগৃহীত তথ্য নিয়ে চুড়ান্ত রিপোর্ট তৈরির এতদিন যা সময় লাগত, এবার আর তা লাগবে না। সেন্সাস এবং এনপিএস সম্পন্ন করার জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার খরচ ধরা হয়েছে।
প্রশ্ন কিন্তু এরপরও আছে। ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের ডেটার ভিত্তিতে কার্ড তৈরি এবং সেই কার্ডে জন্ম শংসাপত্রের তাবৎ তথ্য—তাহলে কি এই কার্ডই পরোক্ষে এনআরসির নামান্তর?